হার দিয়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ শুরু করেছিল বাংলাদেশ। তবে দ্বিতীয় ওয়ানডে জিতে সিরিজে সমতা ফেরায় টাইগাররা। ফলে তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে ম্যাচটি ছিল সিরিজ নির্ধারণী। গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচে ৯৯ রানের বড় ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ।

মঙ্গলবার (৮ জুলাই) আগে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশকে ২৮৬ রানের বড় লক্ষ্য দিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। জবাব দিতে নেমে ১৮৬ রানেই গুঁটিয়ে যায় বাংলাদেশ। এতে ৯৯ রানের বড় জয়ে ২-১ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ ঘরে তোলার লঙ্কানরা।

চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। দলীয় ১৯ রান তামিম এবং ২০ রানে শান্ত আউট হলে চাপে পড়ে টাইগাররা। কিন্তু অপর প্রান্ত থেকে রান তুলতে থাকেন ওপেনার পারভেজ ইমন। তার দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে মাত্র ৯ ওভারেই ফিফটি তুলে নেয় বাংলাদেশ।

তিনে নেমে পুরোপুরি ব্যর্থ নাজমুল হোসেন শান্ত। তামিমের দ্রুত বিদায়ে বাড়তি দায়িত্ব ছিল অভিজ্ঞ এই ব্যাটারের কাঁধে। কিন্তু উল্টো ডাক খেয়ে দলের বিপদ আরো বাড়িয়েছেন শান্ত। দুশমন্থা চামিরার গুড লেংথের বলে বোল্ড হয়েছেন তিনি।

২০ রানে ২ উইকেট হারানোর পর দলের হাল ধরেন ইমন ও তাওহিদ হৃদয়। দুজনের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিল বাংলাদেশ। তবে উইকেটে থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে পারলেন না ইমন। ১৪তম ওভারে ভেল্লালেগেকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে সীমানার কাছে ধরা পড়েন। সাজঘরে ফেরার আগে ৪৪ বলে ২৮ রান করেছেন এই ওপেনার।

ইমন ফেরার পর মেহেদি হাসান মিরাজকে সঙ্গে নিয়ে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন হৃদয়। উইকেটে এসে শুরু থেকেই শট খেলা মিরাজ ভালো শুরু করেছিলেন। তার ইতিবাচক ব্যাটিংয়ে গিয়ার খেলার মোড় ঘুরে যেতে পারতো। তবে হঠাৎ বাজে এক শট খেলে আউট হয়েছেন তিনি। ২৫ বলে ২৮ রান করেছেন অধিনায়ক।

ছয়ে নেমে আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি শামীম হোসেন। দলের জন্য তার উইকেটে থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কিন্তু ব্যর্থ শামীম। হাসারাঙ্গাকে এগিয়ে এসে খেলতে গিয়ে স্টাম্পিংয়ের শিকার হয়েছেন।

শামীম আউট হলেও অপর প্রান্ত আগলে রেখে ৭৫ বলে ফিফটি তুলে নেন তাওহীদ হৃদয়। কিন্তু দুই বল পরেই বোল্ড আউট হন এই তারকা ব্যাটার।

হৃদয়ের বিদায়ে বাংলাদেশ ম্যাচ থেকে অনেকটাই দূরে সরে যায়। আর লোয়ার মিডল অর্ডারে তানজিম সাকিব-তাসকিন আহমেদরা দ্রুত ফিরলে হারের প্রহর গুনতে থাকে বাংলাদেশ! শেষদিকে জাকের আলি একাই লড়াই করার চেষ্টা করেছেন। তবে তার ২৭ রানের ইনিংস কেবলই হারের ব্যবধান কমিয়েছে।

এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো করতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। মাত্র ১ রান করে সাজঘরে ফেরেন ওপেনার নিশান মাদুশকা। তবে কুশাল মেন্ডিসকে সঙ্গে নিয়ে রান তুলতে থাকেন আরেক ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কা। তবে ইনিংস বড় করতে পারেননি তিনি। ৪৭ বলে ৩৫ রান করে তানভীরের বলে ক্যাচআউট হন তিনি।

ইনিংসের ১৯তম ওভারে প্রথমবার আক্রমণে আসেন মিরাজ। নিজের দ্বিতীয় ওভারেই উইকেটের দেখা পেয়েছেন অধিনায়ক। ইনিংসের ২১তম ওভারের শেষ বলটি অফ স্টাম্পের ওপর গুড লেংথে করেছিলেন মিরাজ। টার্ন করে ভেতরের দিকে যাওয়া বল ব্যাটে খেলতে পারেননি কামিন্দু মেন্ডিস, তার প্যাডে যেয়ে আঘাত হানে। তাতে লেগ বিফোরের আবেদন করলে সাড়া দেন আম্পায়ার। সাজঘরে ফেরার আগে ২০ বলে ১৬ রান করেছেন কামিন্দু।

১০০ রানে তৃতীয় উইকেট হারিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। এরপর চারিথ আসালঙ্কাকে সঙ্গে নিয়ে বড় জুটি গড়েন কুশল মেন্ডিস। দুই অভিজ্ঞ ব্যাটারের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে মাঝের ওভারগুলোতে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। অবশেষে সেই জুটি ভেঙেছেন তাসকিন আহমেদ।

৪৫তম ওভারের শেষ বলে হিট উইকেটের ফাঁদে পড়েন জিনাথ লিয়ানাগে। ১৭ বলে ১২ রান করেন তিনি। পরের ওভারে শামীম পাটোয়ারীকে বোলিংয়ে আনেন মিরাজ। ওভারে চতুর্থ বলে শামীমকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ক্যাচ আউট হন কুশল মেন্ডিস। ১১৪ বলে ১২৪ রান করেন তিনি। এতে রানের গতি কমে যায় লঙ্কনদের।

শেষ পর্যন্ত ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার ১৪ বলে ১৮ রান এবং দুশমানথা চামিরার ১০ রানে ভর করে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৮৫ রানের বড় পুঁজি পেয়েছে শ্রীলঙ্কা।